পরবর্তী বৈদিকযুগের অন্যতম সামাজিক বৈশিষ্ট্য হল নারীর মর্যাদা হ্রাস । ব্রাহ্মণ সাহিত্যে এবং মনুসংহিতা সমূহে তার চিহ্ন অত্যন্ত স্পষ্ট । সেখানে কন্যার জন্মের জন্য শোক প্রকাশ এবং পুত্রের জন্য প্রার্থনা প্রকাশ করা হয়েছে ।
( i ) ধর্মাচরণ : ধর্মাচরণে নারীদের ক্ষমতার হ্রাস পায় । ঔতরের ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে কন্যা পরিবারে দুঃখ নিয়ে আসে , পুত্র পরিবারকে রক্ষা করে । অথর্ব বেদে কন্যার জন্মকে দূর্ভাগ্যজনক বলা হয়েছে । তাছাড়া কন্যার অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে পিতামাতার দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না ।
( ii ) আর্থ - সামাজিক জীবন : অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারীর কোন স্বাধীনতা ছিল না । নারীরা পত্নী হিসেবে ধর্মাচরণে ও জায়া রূপে দাম্পত্য জীবনে অংশগ্রহণ করত ।
( iii ) পারিবারিক জীবন : পারিবারিক জীবনেও নারীর পূর্বমর্যাদা অক্ষুণ্ণ ছিল না । বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহের প্রচলন বেড়েছিল । বিধবাবিবাহ ও বহুপত্নীত্বের বিরল দৃষ্টান্ত ছিল না । সাধারণত রাজাদের চারজন করে রানী ছিলেন । প্রধান নারীকে মনিষী বলা হত , দ্বিতীয় স্ত্রী বাবাতা বিশেষ সৌভাগ্যের অধিকারিনী হত । তৃতীয়জন ছিলেন পুত্রহীনা । চতুর্থজন পালাগুলিকে মদ এবং পাসার সম পর্যায়ভুক্ত মনে করা হত । তাছাড়া সম্পত্তির উত্তরাধিকারিনী তিনি হতে পারতেন না ।
( iv ) প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সে যুগের কয়েকজন নারী জ্ঞান ও গৌরবের উচ্চস্তরে পৌঁছেছিল । বৃহদারণ্যক উপনিষদ একটি যজ্ঞে উল্লেখ আছে বিদূষী কন্যাসন্তান কামনা করে । কিন্তু এটি সামগ্রিক চিত্র নয় । যদিও পরবর্তী বৈদিক যুগে গার্গী , মৈত্রেয়ী প্রভৃতি ব্রাহ্মণবাদিনী , দার্শনিক , জ্ঞানবতী নারীদের কথা জানা যায় ।
( v ) সাধারণভাবে নারীদের সামাজিক মর্যাদার অবনয়ন ঘটেছিল । সাংখ্যায়ন শৌত্র সূত্রে দক্ষিণা তালিকায় নারীকে স্থান দেওয়া হয়েছে । তাছাড়া গর্ভস্থ সন্তানটিকে পুত্র হিসেবে পাওয়ার জন্য পুংশবর্ণ নাম অনুষ্ঠান পালন করা হত ।
বৈদিকসমাজের 'চতুরাশ্রম' বলতে কী বোঝায়?